প্রথম স্ট্রাইক থেকে রিপোর্ট

২ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবারে, লন্ডন, ব্রাইটন, লিভারপুল, বাথ এবং গ্লাসগো শহরে ৯০টিরও বেশি জোনে বেশিরভাগ খাবার ডেলিভারি রাইডাররা বেতন বাড়ানোর দাবিতে স্ট্রাইকে যোগ দেন।

২০১৭ সালে, ডেলিভারু প্রতি ডেলিভারির জন্য ন্যূনতম £4 দিত। এখন তারা মোপেডের জন্য ন্যূনতম £3.15 এবং সাইকেলের জন্য ন্যূনতম £2.80 দেয়। এর মানে বাস্তব মূল্যে বেতন ৪০% কমে গেছে। উবার ইটসও একই ধরনের পরিবর্তন করেছে।

এটা ইউকের খাবার ডেলিভারির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্ট্রাইক ছিল। রাইডাররা অ্যাপসের ম্যানেজমেন্টকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন।

অনেক এলাকায়, রাইডাররা ডার্ক কিচেন এবং প্রধান রেস্তোঁরাগুলি বন্ধ করার জন্য পিকেট সংগঠিত করেন। কিছু এলাকায় অনেক রাইডাররা স্ট্রাইক ভেঙে কাজ নিতে চেষ্টা করে – এদেরকে বলা হয় স্ক্যাব। কিন্তু অন্য এলাকায় রাইডারদের সাথে আলাপ করে তাদেরকে স্ট্রাইকে যোগ দিতে রাজি করানো যায়। যেখানে স্ট্রাইক শক্তিশালী ছিল, সেখানে বড় প্রভাব ফেলেছে। সেটার প্রমান পাই অনলাইনে গ্রাহকদের অভিযোগ এবং রেস্তোঁরায় বিপুল অপূর্ণ অর্ডার দেখে।
কিছু এলাকায়, পিকেটের পাশাপাশি রাইডাররা মোটরকেডে এবং বড় সভায় একত্রিত হন। স্ট্রাইক ছড়ানোর চেষ্টায় রাইডাররা কয়েকটা মোটরকেড অন্য এলাকায় নিয়ে যান।

স্ট্রাইকের মাধ্যমে অনেক দেশের লোক একত্রিত হন। এই ভাবে এটা আগে কখনো হয় নাই। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। এইভাবে আন্দোলন শক্তিশালী হবে।

ডেলিভারু, উবার ইটস, জাস্ট ইট, স্টুয়ার্ট সবাই বলবে যে, স্ট্রাইক তাদের উপর কোনো প্রভাব ফেলেনি – এই বলে আমাদের হতাশ করার চেষ্টা করবে। তাই যদি হয়, তাহলে তারা স্ট্রাইক সম্বন্ধে রেস্তোরাগুলিকে এইরকম আতঙ্কিত ওয়ার্নিং কেন দিচ্ছিল? এবং রাইডারদেরকে রাতের বেলা কাজ করানোর জন্য রাজি করতে এত প্রণোদনা দিল কেন?
এলাকা এলাকায় কী হয়েছে, জানা জরুরী। তাহলে আমরা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বেছে নিতে পারবো। এর জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকার রাইডারদের থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছিঃ

আর্লস কোর্ট

‘আমি এলাকায় নতুন এসেছি। ম্যাকডনাল্ডসের পাশে কিছু ড্রাইভারদের সাথে আলাপ শুরু হলো। প্রথমে ইন্ডিয়ান রাইডারদের সাথে। তারা সাথে সাথে হ্যা না বললেও, কিছুক্ষণ পরে স্ট্রাইক করতে রাজি হলো। ব্রাজিলিয়ান রাইডাররা স্ট্রাইক করবে কি না, এই ব্যাপারে তারা আমাকে নিশ্চিত হতে বললো। আলাপ করার পর ব্রাজিলিয়ানরাও রাজি হলো। যখন আমরা দেখি ডেলিভারুতে দাম বেড়ে গেছে, আমরা উৎসাহিত হই। আমরা একটা গ্রুপ হিসাবে কাজ করা শুরু করি, নতুন রাইডাররা পৌঁছালে তাদেরকেও রাজি করাই। আমাদের মধ্যে কয়েকজন স্ক্যাবদের সাথে ঝগড়া করেছিল, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা ভালভাবে বুঝাতে চেষ্টা করেছি। আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে লন্ডনে হাজার হাজার রাইডাররা স্ট্রাইক করছে, আপনিও আমাদের সাথে যোগ দেন। আমরা নতুনদেরকে ওয়াটস্যাপ গ্রুপে যুক্ত করলাম। এর পরে ১৫০টা বাইক নিয়ে আমরা রাস্তা বন্ধ করে দিলাম, অন্য এলাকার স্ট্রাইকে গিয়ে দেখলাম। আমরা সবাই আরো এক দিন স্ট্রাইক করতে খুবই আগ্রহী।

আমরা জানি কম্পানি খুব ভয়ে আছে, কারণ আমরা দেখলাম সোশাল মিডিয়াতে ভূয়া অ্যাকাউন্টগুলো আমাদের মনোবল ভাঙ্গার চেষ্টা করে যাচ্ছে । কিন্তু ওগুলা দেখলেই বুঝা যায় ভূয়া অ্যাকাউন্ট। যখন সামনাসামনি রাইডারদের সাথে আলাপ করি, তারা সবাই স্যাটারডে সানডে পর্যন্তও স্ট্রাইক করতে চায়। আমি ছয় বছর ধরে রাইডারের কাজ করছি। আগে খুব ছোট কাজ – মানে যেই কাজ হেটেও করা যায় – সেগুলার জন্য £3.15 পেতাম। এখন £3.15 পেতে হলে ২-৩ মাইল যেতে হয়। তারা খালি অ্যালগরিদমের দোষ দেয়, কিন্তু অ্যালগরিদম তো নিজে নিজে জন্মায় নাই, কম্পানির লোকই তৈরি করেছে। তারা বলে যে একটা কাজ না করতে চাইলে সহজেই ক্যান্সেল করা যায়। কিন্তু আসলে অ্যালগরিদমের মধ্যে সিস্টেম লুকানো আছে, যাতে কয়েকটা কাজ ক্যান্সেল করলে পরে ৩০ মিনিটের জন্য কাজ পাওয়া যায় না। তারপর আবার অ্যাপস কম্পানিরা বলে তাদের যথেষ্ট রাইডার নাই! এই সব কারণেই আমরা স্ট্রাইক করছি।’

হোয়াইটচ্যাপেল

২০ জন বাঙালি এবং ব্রাজিলিয়ান রাইডার হোয়াইটচ্যাপেলের অ্যাসেম্বলি প্যাসেজে এডিশনস ডার্ক কিচেনকে বন্ধ করে দিয়েছিল। আরেক দল রাইডাররা এলাকার অন্য এডিশনস ডার্ক কিচেন এবং আশেপাশের রেস্তোঁরাগুলিকে বন্ধ করে দিল। খুব কম রাইডার অর্ডার নিতে আসছিল, আর যারা এসেছিল, তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছিল। রাইডাররা স্বাভাবিক অর্ডারের ভিত্তিতে অনুমান করে যে, শুধুমাত্র এই এক স্ট্রাইকের কারণে ডেলিভারু প্রায় £30,000 হারিয়েছে। অনেকজন রাইডার বলে, এক দিন স্ট্রাইক করে না জিততে পারলে তারা আবার স্ট্রাইক করবে। কয়েক ঘন্টা পরে, রাইডাররা অন্যান্য এলাকার রাইডারদের সাথে মিলে বড় গ্রুপ হিসাবে ঘুরেছিল।

ফরেস্ট হিল

২০জন রাইডার ফরেস্ট হিলের এডিশনস কিচেনে পিকেটিং করেছে। আরও রাইডার কিচেনে পৌঁছিয়ে স্ট্রাইক সম্পর্কে জানতে পারলে তারাও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যোগ দিয়েছিল। খুব কম রাইডার অর্ডার তুলতে চেষ্টা করেছে। কিছুক্ষণ পরে কিচেনের ম্যানেজার অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছিল। কয়েক ঘন্টা ধরে কিছুই ঢুকে নাই বা বের হয় নাই। বেশির ভাগ রাইডার মনে করে যে, শুধু এক দিন স্ট্রাইক করে বেতন বাড়ানো যাবে না। তারা দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। স্ট্রাইকের কয়েক দিন পর ডেলিভারির রেইট কিছুটা বেঁড়ে গেছে মনে হচ্ছে।

আমরা এরকম আরও বুলেটিন তৈরি করতে চাই। আপনার এলাকার আপডেট ওয়াটসঅ্যাপে আমাদের সাথে শেয়ার করেন (মেসেজ বা ভইস নোট) +447598260453।

আমরা কী ভাবে জিতব?

রাইডারদের সাথে আলাপ করে স্ট্রাইক জিতার কিছু কায়দা প্রস্তাব করছিঃ

বার বার স্ট্রাইক করে জয়

যে কোনো আন্দোলন সফল হতে এক দিনের বেশি স্ট্রাইক দরকার। গত শুক্রবার রাতের পরে অ্যাপগুলির ম্যানেজাররা চিন্তিত হবে। তারা অনেক টাকা হারিয়েছে। কিন্তু তাদের কায়দা ঠিক করতে সময় লাগবে। তারা এক জন আরেকজনের সাথে মিটিং করে করে ব্যস্ত থাকবে। এই স্ট্রাইকের রিস্ক কতটুকু, তারা অনুমান করতে চেষ্টা করবে। লন্ডনে এর আগেও ডেলিভারি রাইডাররা স্ট্রাইক করেছে, কিন্তু এক দিনের পর স্ট্রাইক ছুটে যায়। ম্যানেজাররা মনে করছে এবারও এটা হবে। তাদের অনেক টাকা জমা আছে বলে তারা এক দিনের স্ট্রাইক সহ্য করতে পারে। রাইডাররা যদি বার বার স্ট্রাইক করতে পারে, এবং প্রতি বার আরও বেশি রাইডারদেরকে টেনে আনতে পারে, তাহলে কম্পানিগুলা সত্যি ভয় পাবে। নিয়মিত এবং চলমান স্ট্রাইক করতে হবে – যতদিন না পর্যন্ত ম্যানেজমেন্ট না শুনে। অনেক সফল স্ট্রাইকের স্লোগান ছিল, ‘We strike to win!’ যত বেশি রাইডারদেরকে বুঝাতে পারি, আন্দোলন তত বেশি শক্তিশালী হবে। আপনারা এক মত হলে, যে কোনো সুযোগেই অন্য রাইডারদেরকে চলমান স্ট্রাইকের আইডিয়াটা বুঝিয়ে দেন।

বিশাল বড় স্ট্রাইক গড়তে হবে

বেশি রাইডার কাজ বন্ধ করলে অ্যাপ কম্পানির বেশি ক্ষতি। প্রতিটা স্ট্রাইকের দিনে যত বেশি রাইডার স্ট্রাইকে যোগ দেয়, তত কম দিনে আমরা জিততে পারবো। স্ট্রাইক ছড়াতে সময় লাগবে। গত সপ্তায় যেই সব জায়গায় স্ট্রাইক বা পিকেট ছিল না, সেখানে গিয়ে গিয়ে রাইডারদেরকে বুঝাতে হবে, রাজি করাতে হবে। আমরা যদি আগামী কয়েক সপ্তার জন্য প্রতি সপ্তায় একবার নিয়মিত স্ট্রাইক করতে রাজি থাকি, তাহলে এটা অন্য এরিয়ার অনেক রাইডারদেরকে জড়িত হতে অনুপ্রাণিত করতে পারে। দুই বছর আগে ইংল্যান্ডের উত্তর অঞ্চলে বড় আকারের কুরিয়ার স্ট্রাইক হয়েছিল। যে ড্রাইভাররা শেফিয়ালডে স্ট্রাইক শুরু করেছিলেন, তারা IWGB ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। তারা প্রতি সপ্তায় কয়েক দিন স্ট্রাইক করতেন এবং মাঝখানের দিনে অন্য শহরে অ্যাপসের কাজ নিয়ে ড্রাইভারদের সাথে কথা বলতে যেতেন। তাদের এই পরিশ্রমের ফলে স্ট্রাইক ১০টা শহরে ছড়িয়ে যায়। আমাদের এইভাবেই লন্ডনের সব এলাকায় এবং অন্যান্য শহরেও স্ট্রাইক ছড়িয়ে দিয়ে হবে। আপনি এক মত হলে, নিজের এলাকায় শক্তিশালী স্ট্রাইক গঠন করার পরে চেষ্টা করেন এই সপ্তায় কয়েক দিন অন্য এলাকায় কাজ নিয়ে সেখানকার রাইডারদের সাথে আলাপ করতে, বন্ধুত্ব তৈরি করতে। অথবা আপনারা কয়েকজন মিলে এই কাজ করতে পারেন।

সব এলাকার কোর্ডিনেশন

যারা গত শুক্রবারে স্ট্রাইক ডেকেছিলেন, তারা খুব ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু তারা শুধুমাত্র কয়েকজন লোক। তারা একা সব কাজ করতে পারবে না। আমাদের সবার অবদান রাখতে হবে। একেক এলাকার রাইডারের গ্রুপ ক্যাপটেন নির্বাচন করতে পারেন, যার কাজ হচ্ছে অন্যান্য এলাকার ক্যাপটেনদের সাথে কোর্ডিনেশন। ক্যাপটেনরা মিটিং করে ভবিষ্যতের স্ট্রাইকের পরিকল্পনা করতে পারবে এবং এলাকা এলাকায় স্ট্রাইক ছড়ানোর কোর্ডিনেশন করতে পারবে।

আপনার কী মনে হয়? স্ট্রাইক শক্তিশালী করার আইডিয়া থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনঃ +447598260453


author

Rebel Roo

A bulletin produced by food couriers and their supporters to spread workers’ struggles.